স্বদেশ ডেস্ক:
আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনের স্বীকৃতি আদায় করা এখনো সম্ভব হয়নি তালেবানের পক্ষে। আজ কাবুল কব্জা করার এক মাস হয়ে গেল, কিন্তু কট্টরবাদী ইসলামি গোষ্ঠীটি বিশেষ করে আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত এবং পশ্চিমের দেশগুলো থেকে সমর্থন আদায় করতে পারেনি তালেবান। ছিয়ানব্বইয়ের নয়ছয় নীতি থেকে সরে আসার যে প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছিল, তারা তা ভঙ্গ করে পশ্চিমা সামরিক বাহিনী চলে যাওয়ার পর পরই পুরনো চেহারায় ফিরেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, ঠিক এ কারণেই বিশ্বমঞ্চ বিমুখ হয়ে আছে তাদের থেকে।
তবে গতকাল কলকাতাভিত্তিক ভারতীয় বাংলা গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-
শিগগির তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকারকে স্বীকৃতি দিতে পারে নয়াদিল্লি। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনো এমন কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
আঞ্চলিক অন্যতম পরাশক্তি চীন ৭ সেপ্টেম্বর তালেবানের অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা হওয়ার পর পরই তালেবানের সঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়েছিল, যদিও বেইজিং এখনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
তালেবানকে পোষণ ও তোষণ করে বলে যে দেশের প্রতি বারবার অভিযোগ আনা হয়েছে, তালেবানের নতুন সরকার নিয়ে সেই পাকিস্তানের ভূমিকাও অস্পষ্ট।
যে সৌদি আরব বাকি বিশ্বের তোয়াক্কা না করে ১৯৯৬ সালে তালেবানকে স্বীকৃতি দিয়েছিল, এবার তারা তালেবানের কাবুল দখলের পর একটি কথাও বলেনি।
রবিবার কাবুল সফরে গিয়েছিলেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল থানি ওই সফরে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী মোল্লা হাসান আখুন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু দোহায় ফিরে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় এখনো আসেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাইয়্যেদ আব্দুল্লাহ নিজামি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, কয়েকটি দেশ বিশেষ করে কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন এবং পাকিস্তান তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে, কিন্তু আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির কোনো প্রতিশ্রুতি এখনো তারা দিচ্ছে না। নিজামির ভাষায়, ‘দেখে মনে হচ্ছে- একটি দেশ যেন আরেক দেশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তারা কী করে।’
তালেবানের সরকার ঘোষণার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও পশ্চিমা দেশগুলো সেভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে আল জাজিরা যেমন বলছে- তারা পুরো পরিস্থিতি ‘পর্যবেক্ষণ’ করছে।
সংবাদ প্রতিদিন গতকাল জানিয়েছে, ভারতের কূটনৈতিক মহলের দাবি- সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি সপ্তাহেই তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে পারে নয়াদিল্লি। আর ‘স্বীকৃতি দিয়ে তাদের আঁচ থেকে কাশ্মীর বাঁচাতে চায়’ নয়াদিল্লি।
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর বলেছে- তারা ভারতশাসিত কাশ্মীরে মুসলিমদের ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখছে। এতেই তালেবানের পাকিস্তানপ্রেম আরও স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছে। পাশাপাশি চীনপন্থিতাও প্রতীয়মান হয়েছে। কারণ সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের যে চীন নিপীড়ন করে আসছে, বিশ্বাঙ্গন থেকে, এমনকি গণহত্যার অভিযোগ তোলা হলেও তালেবান ওই বিষয়ে চুপ রয়েছে। চুপ কী, বেইজিংয়ের প্রশংসায় তারা পঞ্চমুখ।
১৯৯৬ সালে প্রথমবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিল তালেবান। আল কায়েদার জঙ্গিরা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলা করে হাজার তিনেক মানুষকে হত্যা করলে, আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানে তালেবানকে উচ্ছেদ করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ওয়াশিংটন ২০ বছর যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে শেষে সেই তালেবানের কাছেই আফগানিস্তানকে ‘তুলে দিয়ে গেছে’ শান্তিচুক্তির নামে।